বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। টিআর-কাবিখাসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ভূমিকা রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির নেতারা।
এদিকে জেলার প্রায় সব উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা দীর্ঘদিন পলাতক ও আত্মগোপনে থাকলেও ক্রমান্বয়ে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন তারা। তাদের বন্ধ থাকা মোবাইল ফোন নম্বর, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলো ক্রমান্বয়ে চালু হচ্ছে। অনেক নেতা ফ্যাসিবাদের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবর হচ্ছেন। এদের অনেকেই স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে নিজ দলকে সংগঠিত করছেন বলে অভিযোগ খোদ বিএনপি নেতাদের।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও সচেতনমহলের দাবি, এখনো তৃণমূল পর্যায়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী লীগের পদধারী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সভা ও চা-চক্রে মিলিত হচ্ছেন তারা। এলাকায় নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে, কিংবা আর্থিক সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে টেনে দল ভারী করছেন বিএনপির সুবিধাভোগী নেতারা। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় গোপনে বড় ধরনের সহিংস আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে বরিশাল নগরীতে ঝটিকা মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই বিরোধ শুরু হয়েছে।
বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের ‘গডফাদারখ্যাত’ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তার ছোট ছেলে আশিক আবদুল্লাহ ও মেয়ে আঞ্জুমানারা কান্তা আবদুল্লাহকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান ৫ আগস্টের এক সপ্তাহ আগেই। ৫ আগস্টের পর ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, তার স্ত্রী লিপি আবদুল্লাহ ও তাদের পরিবারের আরেক সদস্য ফিরোজা সুলতানাসহ অন্যরা গোপনে ভারতে পালিয়ে যান। হাসানাতের বড় মেয়ে কান্তা এক ভারতীয়কে বিয়ে করার সুবাদে পরিবারের সবাই এখন ভারতেই বসবাস করছেন। একইভাবে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুছ বিএনপি নেতাদের আশীর্বাদে বরিশাল নগরীতেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
একইভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও দ্বিতীয় সারির নেতারা নগরীতেই রয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা হিরনের নেতৃত্বে বরিশাল নগরীর প্ল্যানেট ওয়ার্ল্ড শিশুপার্কে আওয়ামী লীগ নেতারা গোপন বৈঠক করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম ও নাশকতার জন্যই ওই বৈঠকটির আয়োজন করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগ নেতারা কিছুটা চাপের মধ্যে থাকলেও নগরীর বাইরে বরিশালের ১০টি উপজেলার অধিকাংশগুলোতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতারা অনেকটাই চাপহীন।
বরিশাল-১ আসন
আগৈলঝাড়া-গৌরনদী নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ সংসদীয় আসন। এ আসনের বারবার সংসদ সদস্য ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আর বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো এখানকার নেতাদের ইচ্ছেমতো। এ দুই উপজেলার প্রভাবশালী নেতারা কারাগারে থাকলেও অধিকাংশ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এখনো এলাকায় আছেন। বিশেষ করে আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার, রত্নপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সরদার, বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল চন্দ্র দাসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এলাকায় অবস্থান করে দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ।
একইভাবে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টুর বউয়ের বড় ভাই গৌরনদী পৌরমেয়র আলউদ্দীন ভূইয়া ও শ্যালক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সান্টু ভূইয়া নিজ এলাকয় বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। বিএনপি নেতার নিকটাত্মীয় হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন অপকর্ম করার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
একইভাবে গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানের মধ্যে কেবল চাঁদশী ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা পলাতক রয়েছেন। বাকি ছয় ইউপির চেয়ারম্যান কাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তারা প্রশাসনিক বিভিন্ন বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছেন। পাশাপাশি বিএনপি নেতারা এসব চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু আমার দেশকে বলেন, ‘আমার বড় পরিচয় আমি বিএনপি করি এবং আত্মীয়স্বজন পরে। আমি কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছি না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
বরিশাল-২ আসন
উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসন। এখানকার অধিকাংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এখনো এলাকায় রয়েছেন। গোপনে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এই দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিলর আত্মগোপনে রয়েছেন। এর মধ্যে উজিরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে গুঠিয়া, ওটরা, বামরাইল ও হারতা ইউপির চেয়ারম্যান পলাতক। বাকি পাঁচ ইউপির চেয়ারম্যানরা এখনো প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিএনপি নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছেন তারা। যেসব নেতা পলাতক রয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। নিয়মিত পোস্ট দিচ্ছেন সরকারের বিরুদ্ধে।
এদিকে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরমেয়র পলাতক রয়েছেন। তবে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা এখনো এলাকায় রয়েছেন। গত ২৪ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উদ্যোগে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সাতটির মধ্যে পাঁচটি ইউপির চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম মিঞাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। অভিযোগ রযেছে, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। তবে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিএনপির একজন নির্যাতিত কর্মী। আমরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছি না। আওয়ামী লীগের নেতারা কী করে এলাকায় থাকছেনÑ তা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবেন।’
বরিশাল-৩ আসন
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের মধ্যে বাবুগঞ্জের ছয়টি ইউপির দেহেরগতি, আগরপুর, চাঁদপাশা ইউপির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতারা এলাকায় নির্বিঘ্নে রয়েছেন। বিএনপির নেতাদের ম্যানেজ করেই তারা নিয়মিত পরিষদে আসছেন এবং স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুলতান আহম্মেদ খান ও সদস্য সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্সের সঙ্গে তাদের দহরম মহরম রয়েছে বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে।
মুলাদীতে সাতটি ইউপির মধ্যে পাঁচটি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। অভিযোগ রয়েছে, মুলাদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শরীয়তুল্লাহ, সদস্য সচিব কাজী কামাল হোসেন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মিজান হাওলাদার ও সদস্য সচিব আরিফুর রহমান টিপু এসব আওয়ামী লীগের নেতা ও চেয়ারম্যানদের এলাকায় পুনর্বাসিত করছেন। অভিযোগ রয়েছে উল্লেখিত নেতারা সংশ্লিষ্ট ইউপির টিআর, কাবিখাসহ সব কিছুই নিজেরা ভাগবাঁটোয়ারা করেন। চেয়ারম্যান কেবল সই দিয়েই তা বৈধতা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আ. ছত্তার খান বলেন, মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান খান পালিয়ে গেলেও তার অনুসারী বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েল, যুবলীগ সভাপতি রাসেল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অহিদ খান সহ অনেকেই বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে বৈধ সুবিধা নিয়েই তাদের পূনর্বাসিত করা হচ্ছে।
পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক ইনু বলেন, ‘আমরা তাদের তাড়িয়ে দিতে পারছি না সমালোচনার ভয়ে। তারা এলাকায় আছেন, পরিষদে যাচ্ছেন। তবে সুবিধা নিয়ে তাদের পুনর্বাসিত করছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলাকায় অবস্থান নিচ্ছে বলেও স্বীকার করেন এই বিএনপি নেতা।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী কামাল হোসেন বলেন, সারাদেশেই আওয়ামী লীগের পদধারী ইউপি চেয়ারম্যানরা প্রকাশ্যে আছেন। সরকার তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা কী করতে পারি। তবে তিনি আর্থিকসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বরিশাল-৪ আসন
বরিশাল-৪ হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ আত্মগোপনে অছেন। তবে প্রকাশ্যেই আছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র কামাল উদ্দীন খান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সরোয়ার আলম আজাদ। নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজ এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছেন। এ ছাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগের পদধারী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীরা এলাকায় অবস্থান করে গোপনে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
একইভাবে হিজলা উপজেলার আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা এলাকায় আধিপত্য বজায় রেখেছেন। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য সচিব দেওয়ান মনির হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন খোকন দপ্তরিসহ তাদের সমর্থকরা আওয়ামী লীগের এসব নেতাদের কাছে টেনে দলভারী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নেতাদের সঙ্গে তারা প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা ও চায়ের আড্ডা দিচ্ছেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুল গফ্ফার তালুকদার বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি। ওই মামলায় দুধখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন খোকন দপ্তরী তার জন্য থানায় খাবার নিয়ে যান। এর চেয়ে লজ্জার ঘটনা কী আর হতে পারে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ওই দুই নেতা যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসিত করছেন, আগামী দিনে আমরাই এলাকায় থাকতে পারব কি না জানি না।
জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালীকে গ্রেপ্তার করার পর তার জন্য সাবেক বিএনপি নেতা ফারুক খান থানায় খাবার নিয়ে গিয়েছে বলে শুনেছি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সুসম্পর্ক নেই। তবে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হেসেনের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
বরিশাল-৫ আসন
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু কারাগারে আছেন। বর্তমান বহিষ্কৃত মেয়র আবুল খায়ের খোকন আবদুল্লাহ সপরিবারে খুলনায় আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী বরিশালেই অবস্থান করছেন। তবে বিভাগীয় নগরী হওয়ায় পুলিশ প্রসাশনের তৎপরতা ও বিএনপির নেতাদের সক্রিয়তার কারণে তেমন সুবিধাজনক অবস্থানে নেই আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে মাঝেমধ্যে রাতের আঁধারে বরিশাল নগরীতে ঝটিকা মিছিল বের করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে চাচ্ছেন তারা।
বরিশাল-৬ আসন
বরিশাল-৬ আসনে বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ১৪টি ইউপির চেয়ারম্যানের মধ্যে ভরপাশা, রঙ্গশ্রী, দাড়িয়াল, দুধল ও কবাইয়ের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুগলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিএনপি নেতাদে সঙ্গে আঁতাত করে প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ জেরা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানের নমনীয়তায় পৌর বিএনপি, যুবদল, নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌরমেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানের ইশারায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন তালুকদার শাহীনের ভাড়াবাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এর বিনিময়ে অর্ধকোটি কোটি টাকার দেন-দরবার হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে।
এ বিষয়ে আবুল হোসেন খান বলেন, ‘বিএনপির কোনো নেতা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে না। এসব মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন বলেন, বিএনপির বর্তমান কমিটির লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এ কারণেই বাকেরগঞ্জে ঘটা করে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালিত হয়েছে। তিনি বলেন, লোকমান ডাকুয়াকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানের সমর্থনে আশ্রয় দেওয়া হয়। নিশ্চয়ই বিনা লাভে তাকে আশ্রয় দেননি তারা।